সপ্না আমার সব বলতে পারো আমার বন্ধু, আমার প্রিয় মানুষ আবার আমার সুখ দুঃখের সাথী। কিন্তু আজ আমার সাথে ওর শেষ দেখায় বলতে পারো। এটায় আমার সাথে ওর শেষ দেখা।আসলে যার জীবনে এমন ঘটেছে সেই এখন অনুভব করতে পারবে আমার কেমন লাগছে বিকাল ৪টার সময় সপ্নার সঙ্গে আমার দেখা করার কথা সেখানেই যাচ্ছি আমার নামই তো বলা হয়নী আমি রকি।
(গাড়ি থেকে নেমে)

দাদা : এই সবগুলো গোলাপের দাম কত?
দোকানদার: এখানো তো ৫০ পিস গোলাপ আছে স্যার ৫টা পিস তো দাম হয় ২৫০টা কিন্তু ২৫৫টাকা দিলে খুশি হতাম গরীব মানুষ ই তো স্যার বোঝেনই।
রকি:ঠিক আছে আমি ২৫৫ টাকায় দিচ্ছি আপনি আমাকে ৫০টাই দিন।
গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে আমি রেলের রাস্তার পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলাম সেই নির্জন জায়গায় যেটা সপ্নার খুব পছন্দের জায়গা।
সপ্না:  তোমার কী কোনো দিন বুদ্ধি হবে না আজ ও লেট করলে আজ ও দেরী করে আসলে আমি কত সময় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি।
রকি : ( সপ্না মায়ের পর তোমাকে না দেখলে কখনো বুঝতে পারতামই না যে মেয়ে মানুষ সত্যি কত ধর্য্যশালী, কত চাপা, কত ত্যাগী, তোমাকে দেখে মনেই হচ্ছে না আর ৪দিন পর তোমার বিয়ে তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কারুর সাথে থাকবে অন্য কারুর হয়ে যাবে।
সপ্না: কী হলো চুপ করে সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন। কিছু তো বলো।
রকি : হ্যাঁ, আজকে দেরি হয়ছে তার জন্য sorry
সপ্না: জানো রকি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে না আমার ভালোই লাগে আর সত্যি বলতে ভালোবাসার মানুষের জন্য তো সারা জীবন অপেক্ষা করা যায়।
রকি : এই নাও
সপ্না: এ বাবা এতো গোলাপ
রকি : হুম , এটাই তো আমাদের শেষ দেখা আর কোনো দিন তোমাকে তো গোলাপ দিতে পারবো না তাই মন চাইলো আর রাস্তাও পেয়ে গেলাম আর নিয়ে চলে আসলাম।
সপ্না : আচ্ছা বুঝতে পারছি শোনো না তোমার সঙ্গে একটা সেলফি তুলি।
রকি : আর ৪দিন পর তো বিয়ে তো এখন সেলফি তুলে আর কী করবে সেই তো ডিলিট করে দিবে।
সপ্না: সে যায় করি, ইচ্ছে করছে তুলতে তাই বললাম।
রকি: ঠিক আছে তুলো এমন কোনো দিন হয়েছে যেদিন তোমার ইচ্ছের গুরুত্ব আমি দিইনী।
সপ্না :আচ্ছা , তুমি আমাকে ভুলে যাবে না তো কাজের মাঝে?
রকি : বোকা বোকা কত বোলো না তো এসব কথা তোমার মুখের মানায় না।
সপ্না : দেখ আকাশ কেমন জেন থমকে আছে।
রকি : ও মা তা আজ তোমার আমার শেষ দেখা আকাশ তো থমকে থাকবেই। মনে আছে যেদিন তোমাই প্রথম দেখি সেদিন আকাশ কত সুন্দর ছিল নীল সাদায় মেখে ছিল আর রোদও ছিল সোনালী ।
সপ্না: থাক থাক কবি মসাই হয়েছে থামো এবার।
চল, না আমরা হাত ধরে একটু পাশাপাশি হাটি কিছুক্ষণ
রকি : চল,
সপ্না: শোনো সাবধানে থাকবো, আর কখনো উল্টো পাল্টা জিনিস খাবো না মনে রাখবো ওটা তোমার দেশ না নতুন জায়গা তাই একটু কষ্ট তো হবেই তো মানিয়ে নিয়ে থাকতে হবে। নিয়মিত রেস্ট নিবে কিন্তু আর তারাহুরো করবে না একদম। আর এখন কেনই বা তারাহুরো করবে বলো এখন তো আর আমার সাথে কথা বলতে হবে না যে তাই তারাহুরো করতে হবে । তাড়াতাড়ি টিউশন পড়য়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
রকি : সবই তো বুঝলাম কিন্তু, আমি তো একা নতুন জায়গায় যাচ্ছি না তুমি ও তো যাচ্ছো?
সপ্না : শশুরবাড়ি আবার নতুন জায়গা হলো নাকি ওটা আমার নিজের বাড়ি হলো তাই না।
রকি : হুম আর কত হাসিমুখে থেকে আমার সাথে সব মেনে নেওয়ার অভিনয় করবো বলো।
সপ্না: সব মেনে নেওয়ার কী আছে আর অভিনয় এর ই বা কী আছে ?
#দাড়াও বাড়ি থেকে কল করছে মনে হয় #
মা : কী রে মা কোথায় আছিস তুই ?
সপ্না : এই তো বাইরে একটু পরেই চলে আসছি।
মা : সনধ্যার আগেই বাড়িতে আসবি কিন্তু।
সপ্না: আচ্ছা
রকি : তোমাকে তো বাড়ি ফিরতে হবে সনধ্যাও তো লেগে আসছে ।
সপ্না : হুম কাল কখন বেরবে।
রকি : কাল বিকালে মামাদের বাড়িতে গিয়ে থাকবো, তারপর সকালে বেরতে হবে।
সপ্না : আচ্ছা তাহলে আর কী 
তুমি বড়লোক হয়ে যাবে ।
রকি : তোমাকে একটা কথা বলবো?
সপ্না ‘: হুম বলো
রকি : শেষ বারের মতো আজ তোমাকে ১মিনিটের জন্য একটু জরিয়ে ধরতে দিবো আমাকে?
সপ্না : রকি এমন বলছো কেন?
(তারপর সপ্না শেষ বারের মতো জরিয়ে ধরলাম আর কেঁদেও দিলাম কিন্তু সপ্না কিন্তু একটুও কাঁদে নী)
সপ্না : ঠিক আছে রকি তাহলে এখন আমি আসি?
রকি : হুম এসো ( ভালোবাসার মানুষের কখনো যদি এমনভাবে ছেড়ে যেতে দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন সেই ফিলিংটা কেমন কতটা কষ্ট হয়। এমন কষ্ট যেন কেউ না পায় কারুর সাথে যেন এমন না হয়)
সপ্না: ভালো থেকো।
রকি : আমার আর আমার পরিবারের ভালোর জন্য ই তো তুমি ত্যাগ করলে তোমার ভালোবাসা।
ভালো তো থাকবোই
সপ্না : আসি 
রকি : সবাই ভাবছো না আমি কেমব মানুষ নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর আমি তাকে বিয়ে করতে দিচ্ছি অন্যের হতে দিচ্ছি আর সপ্নাই বা কেমন আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে আর একটু কাঁদছেও না।
আসলে পরিস্থিতি বাস্তবতা, আর সময় সব শিখিয়ে দেই
কে কী, থাকা যাওয়া সব কিছু
১মাস হলো আমার বাবা মারা গেছে আমারা ৪ভাই বোর ২বোন ২ভাই আমি সবাই বড় ছেলে পরিবারে। পড়াশোনা শেষ কিন্তু ওই কপাল খারাপ তাই চাকরি হচ্ছে না । বোনদের বিয়ে দেওয়ার আগেই বাবা মারা গেল, ছোট্ট ভাইয়ের হার্টের সমস্যা অপারেশন না করলে বাঁচাতে পারবো না অনেক টাকার প্রয়োজন মধ্য বিত্ত পরিবার আমাদের। কোথায় পাবো এতো টাকা । বাবা একটা কম্পানিতে চাকরি করতো যা টাকা পেত তাই দিয়ে সংসার আমাদের লোখাপড়ায় খরচ চালাতো। বাবার মৃত্যুর পর আমিই আমার পরিবারের একমাত্র ভরসা একমাত্র ছাদ।
তাই মামারা টাকা পয়সা দিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছে। আর পরশু যাব বিদেশে কবে ফিরবো দেশে জানি না।
আর রইলো সপ্নার কথা আগেই বলেছি ওর আমার সব বন্ধু প্রিয়মানুষ সব আমার সবকিছু জানার পর ও ই আমাকে বললো বিদেশে যেতে নিজের পরিবারের জন্য । ওর বিয়েট কথার হচ্ছিল আমি কবে ফিরবো জানি না তাই আমি আর ওকে কথা দিতে পারিনী তাই বিয়ে করে নিতে হচ্ছে। আর কান্না ব্যাপার সপ্নাকে আমি খুব ভালো করে চিনি তোমরাও হয়তো চিনে গেছো খানিকটা আমার পরিবারের জন্য, আমার জন্য আমার কথা মতো বিয়ে করে নিছে।
ও খুব ভালো করে জানে আমি ওর কান্না সহ্য করতে পারি না তাই হাসি মুখে আমার সামনে থেকে সব মেনে নিল। কারণ ও একবার কাঁদলে আমি কখনো ওকে ছেড়ে যেতে পারবো না।
(সব হাসির পিছনে খুশি নয় কিছু কিছু হাসির পিছনে অনেক কষ্ট ও লুকিয়ে থাকে) 


(লেখিকা - আরাধ্যা রায়)