নিরুপমা : মামনি, তাড়াতাড়ি রেডি হও। দাদু দিদা সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।
মেহল: মা —- বাবা যাবে না আমাদের সাথে?
নিরুপমা : না মামনি বাবা তো অফিসের কাজে বাইরে গেছে বাবা কীভাবে যাবে।
মেহল: কিন্তু, স্কুলে সবার বাবাই তো তাদের সঙ্গে ঘুরতে যায়, দাদুর বাড়ি যায় শুধু আমার বাবাই যায় না।
মেহল: আচ্ছা ঠিক আছে, শোন তোমার বাবা এবার বাড়িতে এলে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে বলবো।
মেহল: সত্যি আচ্ছা।
নিরুপমা : ১বছর পর আবার নিজের বাড়িতে যাচ্ছি, মা বাবাকে ১বছর দেখিনা। বাড়িতে গেলেই তো অনেক পুরানো স্মৃতি ভেসে ওঠবে চোখের সামনে।
( গাড়ি থেকে নেমে গলির মধ্যে দিয়ে মেহলের হাতটা ধরে হেঁটে যাচ্ছি হঠাৎ ********** মেঘ এখানে ভুল দেখছি না তো)
মেঘ: দাদা আমাকে একটা সিগারেট দাও তো।
দোকানদার: তোমার শরীরের যা অবস্থা সিগারেট, আর খেও না বুঝলে।
নিরুপমা : মামনি তুমি এখানে দাঁড়াও আমি আসছি একটু।
মেহল: আচ্ছা মা।
নিরুপমা : মেঘ কেমন আছো? এখানে কবে এসেছো আর এতোদিন কোথায় ছিলে?
মেঘ: একসাথে এতো কথা জানতে চায়ছো দাঁড়াও দাঁড়াও সব বলছি আমি ভালো আছি তোমার কী খবর? আর শুনলাম তোমার নাকি একটা মেয়ে হয়েছে সে কোথায়?
নিরুপমা : হুম, মেহল এদিকে এসো তো মা
মেঘ: তোমার মেয়ের নাম মেহল বা নামটা তো খুব সুন্দর।
নিরুপমা : তোমার ই তো পছন্দের নাম সুন্দর হবে না বুঝি ।
মেহল: মা এটা কে গো,
নিরুপমা : আংকেল হয় মামনি কথা বলো।
মেহল: ভালো আছো আংকেল?
মেঘ: ভালো আছি, তুমি তো খুব মিষ্টি দেখতে।
মেহল: সে না হয় বুঝলাম কিন্তু, একটা কথা বলো?
মেঘ: কী কথা
মেহল: তোমার চুল, দাড়ি কত বড় হয়েছে তুমি কাটো না কেন?
মেঘ: আসলে মেহল আমার মনে থাকে না তো আর কেউ আমাকে মনে করিয়েও দেই না তবে তুমি মনে করিয়ে দিলে এবার কাটবো।
মেহল: সত্যি।
মেঘ: হুম, তবে নিরু তোমার মেয়ে কিন্তু তোমার মতোই হয়েছে ।
নিরুপমা : হুম , তুমি কবে এসেছো বাড়িতে?
মেঘ: ১মাস, মা চলে গেল আর বাড়িটা তো আমার নামে মেঘলার ও বাড়ির ভাগ আছে ওকে বাড়ি টা লিখে দিবো বলেই এখনও আছি এখানে।
নিরুপমা : কী কাকিমা মারা গেছে আমি তো কিছুই জানি না কই, মা বাবা কেউই তো আমাকে কিছু বললো না।
মেঘ: ঠিক আছে, যাও বাড়িতে রাস্তায় এভাবে কথা বলা ঠিক হবে না, তোমার মা বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
নিরুপমা : আচ্ছা।
মেহল: বাই আংকেল
মেঘ: একটু দাঁড়াও ***************এই নাও।
মেহল: Thank you আংকেল তুমি কীভাবে জানলে আমার চকলেট পছন্দ।
মেঘ: আমি জানি আচ্ছা এবার আসো তাহলে
নিরুপমা : আসি তাহলে।
মেহল: দাদু দিদা *********
নিরুপমা : মা বাবা, কেমন আছো? শরীর ভালো আছে তো?
বাবা : হ্যাঁ, রে মা আর তোর মেয়ে এসেছে আরও ভালো হয়ে যাব ।
মেহল: চল দাদু
নিরুপমা : মা, কাকিমা মারা গেছে আমাকে বলোনী তো?
মা : বলা হয়নী তোকে মনে ছিল না। কে বললো তোকে?
নিরুপমা : মেঘ। আসার সময় রাস্তায় দেখা হয়েছিল তাই শুনতে পেলাম।
মা : ও আচ্ছা মন খারাপ করিস না
নিরুপমা : তুমি ভালো করেই জানো কাকিমা আমার কাছে কী ছিল
মা: বলছি, জামাই কবে আসবে?
নিরুপমা: জানি না কাজ যেদিন শেষ হবে আর যেদিন সময় হবে সেদিন।
(পরদিন সকালে)
মেহল: মা, চল না ছাদে যায় খেলা করবো
৭বছর হলো আমার এই বাড়ির ছাদে আমি যায় না কিন্তু, আজ মেয়ের বায়নায় যেতেই হলো।
নিরুপমা : চলো কিন্তু, ছাদে গিয়ে দৌড়া দৌড়ি করবে না।
ছাদে পা রাখতেই আমার চোখের জল আর আটকে রাখতে পারলাম না
মেহল : মা কাঁদছো কেন?
নিরুপমা : কই মা, চোখের মধ্যে পোকা গেছে। মেঘেদের বাড়ির ছাদটার দিকে তাকাতেই দেখলাম আজ ও সেই নীল রঙের ওড়না টা ঝুলছে ছাদে টানানো দড়িতে।
আর বুকের মধ্যে কষ্ট বেড়ে গেলে এটা দেখে।
হঠাৎ দেখি মেঘও ছাদে এসেছে?
মেহল: মা দেখ ওই আংকেল টা আচ্ছা ওটা ওনার বাড়ি?
নিরুপমা : হুম মা, মেঘের দিকে তাকাতেই ওর চোখে চোখ পড়ে গেল আমার। সরিয়ে নিলাম চোখ।
মেহল : হাই আংকেল
মেঘ: হাই কী করছো,
মেহল : মায়ের সাথে আসলাম ঘুরতে, তোমার বাড়িতে আর কেউ নেই আংকেল।
মেঘ: না।
মেহল: তোমার ভয় লাগে না একা একা।
মেঘ: না তো।
নিরুপমা : ছাদে দাঁড়িয়ে এভাবে কথা বলতে হয় না চল, নিচে।
মেহল: আংকেল তুমি দাদুদের বাড়িতে আসো আমারা গল্প করবো। এখন বাই।
মেঘ: আচ্ছা বাই।
মা : নিরুপমা শোন, আমি তোর দিদিভাইকে নিয়ে পূজা দিতে যাচ্ছি আর তোর বাবাও যাবে আমাদের সাথে।
দিদিভাইের নামে মানতটা শোধ করে আসি।
গ্যাস তো শেষ তুই গ্যাস দিতে আসবে গ্যাস দিয়ে গেলে রান্না টা করিস।
মেহল: মা বিরিয়ানি করবে আমার জন্য, পূজা দিয়ে এসে খাবো।
নিরুপমা : আচ্ছা মা তবে, তুমি কিন্তু বাইরে খাবার খাবে না ঠিক আছে।
মেহল: হুম বাই
নিরুপমা : সাবধানে যাস। মা বাবা সাবধানে যেও।
মা : আচ্ছা।
(২ ঘন্টা পর)
গ্যাস তো দিয়ে গেল মেহলের জন্য বিরিয়ানি টা বানিয়ে ফেলি
মেঘ: নিরু তুমি অনেক ভালো আছো স্বামী , মেয়েকে নিয়ে। আমি না হয় তোমার এই ছবির সাথেই গল্প করে কাটিয়ে দিবো ৭বছরের মতো বাকি কটামাস
হঠাৎ ***********
নিরুপমা : ভেতরে আসবো মেঘ?
মেঘ:তুমি এসময় এখানে।
নিরুপমা : কেন? আসতে পারিনা। বিরিয়ানি রান্না করেছি ভাবলাম তোমার প্রিয় পছন্দের খাবার,তাই দিতে এলাম।কিছু মনে করো না, তুমি কী আমার ছবি দেখছিলে?
মেঘ: না, কেন তোমার ছবি দেখবো।
নিরুপমা : তোমার মিথ্যা বলার অভ্যাস টা এখন ও রয়ে গেছে। শোন আয়নায় কখনো মিথ্যা দেখা যায় না, তুমি হয়তো খেয়াল করোনী, তোমার হাতের পিছনে ছবিটা আয়নায় স্পৃষ্ট দেখা যাচ্ছে আমার ছবি।
মেঘ: বিরিয়ানি আমি এখন খায় না, তুমি বিরিয়ানি নিয়ে চলে যাও।
নিরুপমা : তাড়িয়ে দিচ্ছো কিন্তু, আমি তো যাব না আজ ৭বছর ধরে কিছু প্রশনো মনের ভিতর বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি,। দেখা হয় না কথা হয় না জিজ্ঞাসাও করতে পারিনা আজ উত্তর শুনে তারপরে যাব।
মেঘ: কী জানতে চাও বলো।
নিরুপমা : এই আমার মাথার দিব্যি দিলাম, সত্যি বলবে আমার বিয়ের দিন আমাকে নিয়ে তোমার পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কেন,এলে না মেঘ? কেন আমাকে একা ছেড়ে চলে গেলে আর কোথায় ই বা গেলে?
নিরু: এলাম না কোন এই কথা টা তোমার বাবাকে জিজ্ঞাসা কর আর কেন বা চলে গেলাম কাউকে কিছু না বলে।
নিরুপমা: তার মানে বাবা, তোমাকে বলেছিল চলে যেতে বাবা আমাদের ভালোবাসার কথা জেনে গেছিলো
মেঘ: শোন এসব বাদ দাও তুমি ভালো আছো এটায় অনেক
নিরুপমা : আমি ভালো আছি কে বললো তোমাকে।
মেঘ: কেন, তুমি ভালো নেই?
নিরুপমা : সেদিন রাতে তুমি এলে না আমাকে নিতে রাগে, অভিমানে বাধ্য হয়ে বাবা আমার সুখের জন্য যার সাথে বিয়ে দিলো তাকে বিয়ে করলাম। সত্যি এতো সুখে আসি আমি কী বলবো
মেঘ: একটা কথা বলবো
নিরুপমা : হুম বলো
মেঘ: আমার ক্যানসার হয়েছে আর হয়তো ৩/৪মাড বাঁচবো ডাক্তার বলছে ।
নিরুপমা : কী বলছো তুমি?
মেঘ: হুম জানো আমার ভালোবাস না তোমার প্রতি অন্য রকম , তোমার মেয়ে হয়ে গেছে তাও আমার ভালোবাস একটুও তোমার প্রতি কমেনী এখন ও। কী করবো ভুলতে চেয়েছি তাও পারনী।
তারপর তোমাকে নিয়ে এই ৭বছর ধরে একটা বই লিখেছি, ভেবেছিলাম মৃত্যুর আগে বইটা প্রকাশিত হবে কিন্তু হলো না, হয়তো আমি চলে যাওয়ার পর প্রকাশিত হবে।।
আমার বইয়ের নাম হলো ওগো, নিরুপমা
নিরুপমা :, আমাকে ছেড়ে সারা জীবনের মতো চলে যাবে।
মেঘ: কাদছো কেন, শোন তুমিও আমাকে এখন ও ভালোবাসো আমি জানি আর এটাও জানি সারাজীবন ভালোবাসবে আমি বেঁচে থাকি বা মরে যায়। তোমার ওই হৃদয়ে আমাকে যতদিন রাখবে ততদিন আমি তোমার কাছেই থাকবো।
আমার ভাগ্য টা অনেক ভালো মৃত্যুর আগে দেখা হলো তোমার সাথে কখনো ভাবিনী দেখতে পাবো মৃত্যুর আগে তোমাকে?
নিরুপমা :আমাকে মাপ করে দিও তোমাকে এই ৭বছর ভুল বুঝেছি শুধু আর আমি এই জন্মে তো তোমার হতে পারলাম না
মেঘ: কে বললো তুমি আমার না, তুমি আমার ওগো, নিরুপমা বইে সারা জীবন , যুগ যুগ ধরে আমার হয়েই থাকবে আমার মৃত্যুর পরও সবাই জানবে মেঘএর ভালোবাসা নিরুপমা বইটা প্রকাশিত হলে বইটা পড়ো
(কাউকে ভালোবাসলে এমন ভাবে ভালোবাসতে হয় যেটা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে যুগ যুগ বছর ধরে)
(লেখিকা আরাধ্যা)
3 মন্তব্যসমূহ
বাহ্ অনেক ভালো।
উত্তরমুছুনআপনাকে ধন্যবাদ। 😊😊 এই ধরনের গল্প পড়তে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
উত্তরমুছুনঅনেক ভালো লাগছে গল্প টা
উত্তরমুছুন