দিপা : আচ্ছা দাদু তোমার তৈরি করা মেডিকেল কলেজ & হাসপাতালের নাম ক্যালানী কেন দিদার নাম তো নিরুপমা
অনিমেষবাবু : সে অনেক কাহিনি দিদিভাই? কিনা সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো।
দিপা : আমি শুনতে চাই দাদু প্লিজ আমাকে বলো?
অনিমেষবাবু : সে না হয় আমি শোনাবো তবে আমার একটা কথা আছে তোমাকে তোমার দিদাকেও ডেকে আনতে হবে কারণ আমি কাহিনি টা আংশিক বলবো বাকি আংশিক তোমার দিদা বলবো?
দিপা : ও তারমানে দিদাও জানে? তাহলে তো অনেক ইন্টার রেস্টটিং ঘটনা মনে হচ্ছে।
অনিমেষ : মজা কিনা জানি না দিদিভাই। তোমারা এখনকার জেনারেশন তোমাদের ভালোবাসা একরকম আর আমাদের ভালোবাসা ছিল অন্য রকম।
দিপা: উউহু দাদু থামো আমি এখন ই দিদাকে ডেকে নিয়ে আসছি?
২মিনিট পর......
নাও দাদু দিদা এসে গেছে এবার শুরু করো। তাড়াও আমি এখানে এসেছি তোমার সাথে কিছু দিন সময় কাটাতে তাই মজা করবো আমারা শুধু।
নাও নাও শুরু করো দাদু
অনিমেষবাবু : নিরুপমা তাহলে দিদিভাইকে বলি কী বলো?
নিরুপমা : হ্যাঁ এখন তোমার ছোট গিন্নি বড় হয়েছে, অনেক কিছু বোঝে, এতো বার করে যখন শুনতে চাইছে বলো।
অনিমেষবাবু : শোনো দিদিভাই আমার যখন ২৫ বছর বয়স তখন আমি কলকাতায় থেকে ইন্জিনিয়ারিং পড়ছিলাম ওখানেই থাকতাম। কল্যানী নামে একটা মেয়েকে খুব ভালোবাতাম ও আমার থেকে ৩বছরের ছোট হবে ২২ বছর তখন ওর। ও গ্রাজুয়েট করছিলো তখন। ক্যালানী আর আমি একই স্কুলে পড়েছি প্রায় ৪ বছর তখন থেকে ভালো লাগতো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকতাম তারপর মায়া জন্মতে থাকতো, ভালোবাসা তৈরি হলো ২জন ২জনের প্রতি।
ক্যালানী দেখতে ছিল ভারী মিষ্টি ঠিক যেন বিশ্ব কবির কল্পনার অপরিচিত গল্পের নায়িকার মতো। আজও তার মায়াবী চোখের চাহনি ভুলিতে পারিনা আমি, বার বার ডুবে যেতে ইচ্ছে হয় সেই মায়াবী চোখে।
ক্যালানী আমাকে অনেক ভালোবাসতো তার প্রমাণ ও সে দিয়ে গেছে। তাই তো তাহার কথা বার বার মনে পড়ে আর হৃদয় টা ব্যাকুল হয়ে উঠে।
দিপা : এতো ভালোবাসতে ২জন ২জনকে তবুও বিচ্ছেদ হলো কীভাবে দাদু?
অনিমেষবাবু : শরৎচন্দ্র একটা কথা বলেছে না দিদিভাই বড় প্রেম শুধু কাছে টানে না কখনো কখনো দূরেও ঠেলে দেই।
ক্যালানীর বাবা ছিলেন একজন বড় মাপের ডাক্তার। তিনি আমার আর ক্যালানীর সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন। আর তিনি তার মেয়ের জামাই হিসাবে তার মতো বড় ডাক্তার ই চেয়েছিলেন। তার আমার মতো ইন্জিনিয়ারিং ছেলে পছন্দ না। তাই তিনি ক্যালানীর জন্য সুযোগ্য ডাক্তার ছেলে বেছে নেন।
দিপা : তুমি তো বললে ক্যালানীও তোমাকে খুব ভালোবাসতো তাহলে সে তার বাবা মতকে সমথর্ন করল কীভাবে?
নিরুপমা : এবার আমি বলি দিদিভাই শোনো।
কেউ কী চাই তার ভালোবাসার মানুষকে হারাতে। ক্যালানী মামা ছিলো তোমার দাদুর কলেজ principal তোমার দাদুর তখন ইন্জিনিয়ারিং লাস্ট ইয়ার ছিলো সামনে ফাইনাল পরীক্ষা ছিল ক্যালানী তার বাবা কথা না শুনলে তোমার দাদুকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতো, তোমার দাদু ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত আর ক্যালানী খুব ভালো করে জানতো তোমার দাদু বাবা সবটুকু সর্বশো দিয়ে তোমার দাদুকে ইন্জিনিয়ারিং পড়াছে, তো ফেল করে গেলে সব শেষ পরীক্ষা দিয়ে পাস না করতে পারলে চাকরি হবে না আর চাকরি না হলে না খেয়ে মরতে হবে।
শোনো দিদিভাই আজ তোমার দাদুর এতো অর্থ, সম্পদ সবই বলা যায় ক্যালানীর জন্য। সবসময় ভালো বাসায় মানুষ কাছে থাকলেও ভালোবাসা হয় না কখনো কখনো ভালোবাসার মানুষের ভালো জন্য ত্যাগকেও ভালোবাসা বলে যে, ত্যাগ সবাই করতে পারে না।
ক্যালানীর ডাক্তার ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো। তোমার দাদু তখন ভেবেছিলো আমি ডাক্তার না বলে ক্যালানীকে হারাতে হলো, আমি ইন্জিনিয়ারিং হয়ে সবার আগে একটা মেডিকেল কলেজ & হাসপাতালে তৈরি করবো, যার নাম হবে ক্যালানী মেডিকেল কলেজ & হাসপাতাল। সেখানে মেডিকেল students রা পড়বে পাশাপাশি মানুষের চিকিৎসাও হবে।
অনিমেষবাবু : হ্যাঁ দিদিভাই আমি যেদিন ক্যালানীকে হারিয়ে ছিলাম সেদিন ই ঠিক করে নিই আমার মতো আর কতো অনিমেষ ই তো যারা ডাক্তার না বলে হয়তো তাদের ক্যালানীকে হারাছে তাই আর কেউ যাতে তার সখের ক্যালানীকে না হারাই তাই আমি এই কলেজ করবো। এখানে আমি কম খরচে সবাইকে ডাক্তার করার সুযোগ করে দিবো যাতে সবাই জীবন ক্যালানী তার জীবনে থাকে।
দিপা:🥺🥺🥺🥺 সত্যি ভালোবাসা কত সুন্দর।
নিরুপমা : তোমার দাদু ক্যালানীর সব কথা রেখেছে ক্যালানীর সাথে শেষ দেখায় ক্যালানী বলেছিলো তোমার দাদুকে বিয়ে করতে সে তাই করেছে, ক্যালানী একটা ডাইরি দিয়েছিলো তোমার দাদুকে বলেছিলো যতদিন বাঁচবে তোমার মনে কথা লিখবে তোমার দাদু লেখে।
দিপা :এতো ভালোবাসে ক্যালানীকে তোমার হিংসা হয় না দিদা এতে।
নিরুপমা : 😊 হিংসা কেন হবে দিদিভাই। বললাম না ভালোবাসা অন্য রকম জিনিস ক্যালানীর জায়গায় আমি কখনো নিতে পারবো না আর চেষ্টা ও করি না যে মানুষ টা তার জন্য এতো কিছু করতে পারে তার জায়গা আমি কীভাবে নিবো বলো তো।তোমার দাদু আমার যতটুকু দিয়েছে আমি তাতেই মহাখুশি। তোমার দাদুর মতো মানুষ এই পৃথিবীতে সত্যি আর ১টা নেই। সে আমাকে ভালোবাসতে পেরেছে তার এই পবিত্র হৃদয় ১ চিমটি ভালো বাসা আমি পেয়েছি তাতেই আমি ধন্য।
অনিমেষ : দিদিভাই তুমি বললে না তোমার দিদা হিংসা করে না সত্যি কখনো করেনী আর এই অহিংসার জন্য ই হয়তো আমি তোমার দিদা ক্যালানীকে ভালোবাসার পর আবার নতুন করে তোমার দিদাকে ভালোবাসতে পেয়েছি, তোমার দিদার আমাকে বোঝা, আমার প্রতি সম্মান আমার ভালোবাসার প্রতি সম্মান আমাকে আবার ভালোবাসতে শিখিছে। হয়তো ক্যালানীর মতো এতোটা ভালোবাসাতে পারিনী কারণ ক্যালানী আমার এখন ও হৃদয়ের বেশি জায়গাটা জুড়ে আছে । কিন্তু তোমার দিদিার মতো মানুষকেও ভালো না বেসে থাকতে পারিনী যখন সে আমার ভালোবাসার কথা শুনে আমাকে ভুল না বুঝে আমার ভালোবাসকে সম্মান করেছিলো। ৩৭ বছর সংসার করছি একবারের জন্য আমার মনে হয়নী আমি একা মনে হয়েছে আমার বন্ধু আমার সাথে আছে সবসময় তোমার দিদা বন্ধুর মতো পাশে থেকেছি। তোমার দিদাকে বিয়ে করে আমি যেন wife না best friend পেয়েছি ☺️
হয়তো ক্যালানী আমার ভাগ্যে ছিলো না, তবুও তার কথা মাঝে মাঝেই মনে পড়ে আর তখন তোমার দিদা সেই ডাইরিটা বের করে দিয়ে বলে লেখ তোমার মনের কথা ।
দিপা : আর কখনো দেখা হয়নী তোমার সাথে ক্যালানী?
অনিমেষ : 🥺 না তাই তো তাহারেই মনে পড়ে । 🥺 তাই তো আজও ৭০ বছর বয়সে একই আর আর প্রতি মায়া, ভালোবাসা অনুভূতিগুলো।
দিপা : দাদু তোমার ভালো বাসার গল্প শুনে
আমার মনে হচ্ছে সত্যি আমাদের জেনারেশন ভালোবাসা বোঝে না, আর ভালোবাসতেও পারেনা। তুমি, দিদা, ক্যালানী তোমাদের প্রত্যেকের হৃদয় ই অনেক বড়, আর সেখানে অনেক ভালোবাসা আছে।, 😊
❤️লেখিকা : আরাধ্যা রায় ( নন্দিনী) ❤️
ভালোবাসার থেকে সুন্দর জিনিস এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই। সবাই ভালোবাসতে শেখো দেখবে জীবন সুন্দর হবে। 🥰
1 মন্তব্যসমূহ
কত সুন্দর লেখা হৃদয় ছুঁয়ে গেলো
উত্তরমুছুন