নিষাণ আর প্রমা একসাথে বিদ্যালয়ের একই ক্লাসে পড়তো। নিষাণ মেধাবী এবং হাসিখুশি ছেলে, আর প্রমা সপ্রতিভ এবং চঞ্চল। ক্লাসে প্রথম দিনেই নিষাণ প্রমার দিকে নজর দেয়, প্রমার আলাদা একটা ব্যক্তিত্ব তার চোখে পড়ে। সেই থেকেই নিষাণ প্রমার প্রতি একধরনের আকর্ষণ অনুভব করতে থাকে, যদিও সে কখনোই তা সরাসরি প্রকাশ করে না।
প্রথম দিকে প্রমা নিষাণকে সাধারণ এক সহপাঠীর মতোই মনে করতো। নিষাণের সেই আগ্রহ সে কখনো খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। নিষাণ ধীরে ধীরে তার ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিভিন্ন চেষ্টা করতে থাকে। কখনো প্রমার পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে, কখনো তার প্রিয় খাবার আনিয়ে দেয়। এমনকি বিভিন্ন ক্লাস প্রোজেক্টে প্রমার সাথে একসাথে কাজ করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
একবার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্টের কাজ চলছিল, এবং প্রমার কোনো কারণে তাতে একটু দেরি হয়ে যায়। নিষাণ সেই কাজটি রাত জেগে শেষ করে এবং পরদিন প্রমাকে চমকে দেয়। প্রমা প্রথমবারের মতো বুঝতে পারে যে নিষাণ তার প্রতি খুবই যত্নশীল। এভাবে ধীরে ধীরে প্রমার মনে নিষাণের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিতে থাকে। বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরিয়ে আস্তে আস্তে একে অপরকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জানতে শুরু করে তারা।
তবে তাদের সম্পর্ক গভীর হওয়ার কিছুদিন পর, প্রমা একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়। প্রমার স্বপ্ন ছিল বিদেশে পড়াশোনা করার, আর এটি তার জীবনের বড় একটি সুযোগ। নিষাণ জানত যে প্রমার ভবিষ্যতের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিজেকে সামলে সে প্রমাকে বিদায় জানায়। বিদায়ের সময় তাদের দুজনের চোখেই জল ছিল, কিন্তু তারা পরস্পরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা দূরে থেকেও একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখবে।
বিদেশে থাকার সময় প্রমা নিষাণের সাথে প্রায় প্রতিদিনই ভিডিও কলে কথা বলতো, তারা তাদের জীবনের গল্প ভাগাভাগি করতো। নিষাণ তাকে উৎসাহ দিত, আর প্রমা নিষাণকে তার অর্জনগুলো জানাতো। সময় যত গড়াচ্ছিল, তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হচ্ছিল। তারা বুঝতে পারছিল যে দূরত্ব তাদের ভালোবাসাকে কমিয়ে দেয়নি, বরং আরও শক্তিশালী করেছে। প্রমা বুঝেছিল নিষাণই তার জীবনের সেই মানুষ, যে তাকে সবসময় ভালোবেসে গেছে নিঃস্বার্থভাবে।
একদিন প্রমা নিষাণকে বলে, “তুমি জানো, দূরত্ব আমাদেরকে আলাদা করতে পারেনি বরং আরও কাছাকাছি এনেছে। আমি যেন এই দূরত্বের মাঝেও তোমাকে সবসময় অনুভব করতে পারি।” নিষাণ একটু হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, “কারণ ভালোবাসা এমন এক জিনিস, যা দূরত্বে নয়, অনুভূতিতে পূর্ণ হয়।”
এরপর তারা দুজনেই স্বপ্ন দেখতে থাকে একসাথে থাকার। প্রমা পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা করতে থাকে, আর নিষাণ অপেক্ষা করতে থাকে তার প্রিয়জনের জন্য। দীর্ঘ অপেক্ষার পর, প্রমা দেশে ফিরে আসে, আর তাদের ভালোবাসার গল্প সম্পূর্ণ হয় এক নতুন অধ্যায়ের শুরুতে।
তাদের ভালোবাসার সেই মিষ্টি গল্প আজও তাদের বন্ধুমহলে আলোচিত হয়, এবং তারা দুজন মিলে প্রমাণ করেছে যে সত্যিকারের ভালোবাসা কখনোই দূরত্ব বা সময়ের ব্যবধান দিয়ে মাপা যায় না।
(লেখা আরাধ্যা রায়)
0 মন্তব্যসমূহ