আঁখি ছোটবেলা থেকেই রূপকে পছন্দ করতো। আখির বয়স তখন ১৫ নবম শ্রেণিতে পড়তো স্কুলের বইয়ের বাইরে জীবনের মানে বোঝার বয়স নয়, তবুও তার মনে হয়েছিল রূপের চেহারা আর আচরণে এমন কিছু আছে যা তাকে মুগ্ধ করে দেয়। রূপের বয়স ২২ রূপ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তাই সে পাড়ার একটা কোচিংনে টিউটর পড়াতো । আঁখি কখনো তার কাছে পড়েনি, কিন্তু তার বান্ধবী টিনা রূপের কাছে ন পড়ত। টিনা সাথে আঁখিও মাঝে মাঝে কোচিং নানা সমস্যা অযুহাতে বিশেষ করে জীবনবিজ্ঞান বুঝতে পারতে না এই অজুহাতে সেখানে যেত, যদিও পড়ার চেয়ে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল রূপকে দেখা।  

রূপ ছিল গম্ভীর স্বভাবের মানুষ, । টিউশনের বাইরে সে খুব একটা কথা বলত না। পাড়ার সবাই তাকে "রূপ দাদা" বলে সম্মান করত। এই সম্মানটা আঁখির মনে রূপের প্রতি ভালোবাসার মুকুট হয়ে বসে। রূপের প্রতিটি ছোট কাজ, তার কথা বলার ধরণ, এমনকি তার জামা-কাপড়ের রং পর্যন্ত আঁখির মনে গভীরভাবে গেঁথে যেত।  

আঁখি প্রতিদিন নিজের জামার রং রূপের সাথে মিলিয়ে পরার চেষ্টা করত। যদিও রূপ এ বিষয়ে কোনো খেয়াল করত না, তবু আঁখি নিজেকে তার কাছে অপরিহার্য মনে করত। দিনের বেশিরভাগ সময় সে রূপকে নিয়ে ভাবত। সন্ধ্যায় কোচিংয়ে যাওয়ার পথে টিনার সাথে হাঁটতে হাঁটতে রূপের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। জানালার পর্দার ফাঁকে রূপকে এক ঝলক দেখলেই তার দিনটা সফল মনে হত।  

ঘরে ফিরে আঁখি নিজের ডায়রিতে রূপকে নিয়ে লেখালেখি করত। প্রতিদিনের ঘটনার একমাত্র নায়ক ছিল রূপ। সে ডায়রিতে লিখত, “রূপ দাদা, তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। আমি তোমার জন্য কতটা পাগল তুমি ভাবতেও পারবে না তোমার একবার তাকানো আমার সব দুঃখ মুছে দেয়।” বাবা আমার অন্য জায়গায় টিনশন দিয়েছে না হলে আমি তো তোমার কাছেই পড়তাম আর শুধু তোমাকে দেখলাম তার ডায়রির প্রতিটি পাতা ছিল রূপকে ঘিরে সাজানো কল্পনায় পূর্ণ। দিনটা ছিল 24 শে মে রূপের জন্মদিন টিনা যেহেতু সবই জানতো তাই সে আখি কে বলে জানিস আজ রূপ দাদার জন্মদিন। আখি তো শুনি মহা খুশি, সে বলল তুই বিকালে পরতে যাবি তাই না,যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা করে যাস। মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে, চুরি করে বলা যায় আঁখি নিজের হাত পুড়িয়ে রূপ এর জন্য পায়েস রান্না করলো। বিকালে টিনা পড়তে যাওয়ার আগে আখির কাছে এলো।আখি পায়ের টা দিলো টিনা বললো আমি কী বলবো দাদা তোমার জন্য পায়ের নিয়ে আসছি তোমার জন্ম দিন তাই, আখি বললো হুম তাছাড়া তুই তো রূপদাদাকে রাখি পড়াস কিছু মনে করবে না। টিনা পায়েস টা নিয়ে রূপকে দিলো রূপ পায়স না মুখে দিতেই রূপ মুখ জ্বলে উঠলো কারণ আখি বুঝতেই পারিনি সে পায়সে চিনির বদলে নুন দিয়ে দিয়েছে। রূপ জিজ্ঞাসা করলো টিনাকে কি বানিয়েছিস তুই টিনা নুন দিছেছিস চিনি না দিয়ে। টিনা কিছু বলতে পারলো না শুধু চুপ করে থাকলো। তারপর রূপ কেক কাটলো সবাই কেকে খেলে পড়া শেষে টিনা আঁখি কাছে গিয়ে সব বললো আর আঁখিকে বকা দিলো। 
রূপ জন্য বনানো পায়েস এমন হবে কখনো ভাবিনী আখি সে খুব কষ্ট পেলে আর ডাইরিতে লিখলো বিশ্বাস করো রূপ দাদা আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনী, আমি চুরি করে রান্না করছিলাম তো তাই বুঝতে পারছিনী কোনটা নুন আর কোনটা চিনি। আমার হাতও পুরে গেছে জানো। 

এভাবে চলছিলো রূপকে নিয়ে আঁখি পাগলামি, আঁখি যত বড় হচ্ছিল পাগলামিটা যেন আরও বেড়েই চলছিল, এখন আঁখি ১৮ বছর এবার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে আঁখি, রূপে তখন বয়স ২৫ রূপ চাকরির চেষ্টা করছে, টিউশনে ছাড়েনি এখনও। টিনাএখন আর রূপের কাছে পড়তে যায় না, তাই আঁখি একটু রূপকে দেখার সমস্যা, কিন্তু রূপ যখন পড়াতে যেতো আখি সেই সময়টা জানতো, সে এসে রাস্তার মোড়ে দাঁড়াত তিন বছরে আঁখির একটু রূপের প্রতি পাগলামি কমেনী। ২১ তারিখ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু আঁখি খুব ভালোকরে লেখা পড়া করছে সে চাই একটা ভালো রেজাল্ট করবে আর তারপর সে রূপকে তার মনে কথা বলবে এতোদিন সে বলনী কারণ সে ছোট ছিলো কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সে কলেজে যাবে মানে সে বড় হয়ে যাবে তাই, ভালো করে পড়ালেখার পেছনে অবদান রূপেরি কারণ ছোটবেলা থেকেই আঁখি শুনে আসছেযারা ঠিকমতো পড়ালেখা করে তাদের রূপ খুব ভালো বলে। 

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে টিনাকে নিয়ে আখি একটা জেরক্স এর দোকানে গেলো সে ফেসবুক থেকে রূপের একটা ফটো বের করলো জেরক্সের দাদা বললো দাদা এই ছবিটা বের করে দাও। আর শোনা খারাপ কোনো চিন্তা করবে না রূপদাদা যে এই পাড়ায় মহল্লায় কতটা সম্মানীয় সবই জানো। 
রুপের ছবিটা বের করে দিলো নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে টিনা বললো কী করবি ছবিটা দিয়ে বলতো। আঁখি বললো শোন এটা আমি আমার সাথে নিয়ে যাবো পরীক্ষা হলে তাহলে আমার পরীক্ষা ভালো হবে, রূপ দাদা সাথে থাকলে আমিও খুশি আমার মনও ফ্রেশ আর পরীক্ষাও ভালো হবে। টিনা বললো সত্যি আমি তোর মতো পাগল কখনো দেখিনী যার জন্য এতো পাগামী করিস সে তো জানই না যে তুই তার জন্য এতো পাগল। শোন আমি পাগল না পাগলি শুধু রূপ দাদার পাগলি, আর পরীক্ষা টা শেষ হতে দে সেও জানবে আমি কেমন পাগলি তার জন্য। 

পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। আজ লাস্ট পরীক্ষা ছিল পরীক্ষা দিয়ে টিনা আর আখি বের হচ্ছিলো হঠাৎ রূপের সাথে দেখা রূপ বললো কেমন হলো টিনা তোর পরীক্ষা টিনা বললো ভালো, আঁখিকে জিজ্ঞসা করলো আর তোমার। আঁখি অবাক হয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে রইলো কারণ সে কখনো আশা করেনী তাকে জিজ্ঞেসা করবে, টিনা বললো কী রে বল কেমন হলো আঁখি বললো অনেক ভালো ☺️ পরীক্ষা শেষ 

একদিন সাহস করে আঁখি তার মনের কথা রূপকে বলার সিদ্ধান্ত নেয়। বিকেলের এক মিষ্টি সময়ে, টিউশন শেষে রূপ যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, আঁখি তাকে থামিয়ে বলে, “রূপ দাদা, আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।” রূপ তার দিকে তাকায়, তার মুখে একটুখানি অবাক ভাব। আঁখি তখন কাঁপা গলায় বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেকদিন ধরে বলতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু সাহস পাইনি।”  

রূপ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর মৃদু হাসি দিয়ে বলে, “আঁখি, তুমি খুব ভালো আমি তোমাকে কখনো সেই চোখে দেখিনি। তুমি এখনো অনেক ছোট, জীবনে অনেক কিছু করতে হবে তোমাকে। এ ভালোলাগা হয়তো তোমার কল্পনা, সময়ের সাথে তা বদলে যাবে।”  

রূপ চলে যায়। আঁখি সেদিনের মতো কিছু বলতে পারেনি। তার ডায়রির পাতা সেদিন ভিজে গিয়েছিল চোখের জল দিয়ে। কিন্তু তার মনে রূপের প্রতি ভালোবাসা অটুট তার বিশ্বাস ছিলো রূপ তাকে ভালোবাসবে ঠিক একদিন। 

 
উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হয় আখি অনেক ভাল রেজাল্ট করে, আখির বাবা আখিকে ব্যাঙ্গালোর একটা কলেজে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আখি কিছুতেই রাজি হয় না, সে চাই এখানে থেকে এখানের কোনো একটা কলেজে পড়বে, কিন্তু তার বাবা শোনে না। 

একদিন সে রূপের সাথে দেখা করে রূপকে বলে রূপ দাদা তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো না, তুমি জানো আমার বাবা আমাকে ব্যাঙ্গালোর পাঠিয়ে দেবে ওখানে একটা কলেজে আমাকে ভর্তি করবে বলছে, কিন্তু আমি,দ যেতে চাই না, আমি ওখানে গেলে আমি তোমাকে দেখতে পারবো না, তোমাকে না দেখলে যে আমার ভালো লাগেনা। রূপ বলল এগুলো তোমার ছেলেমানুষে ছাড়া কিচ্ছু না দেখো আমি আগেই তোমাকে বলেছি, এখানে আমার একটা সম্মান আছে। দয়া করে তুমি আমার সম্মানটা নষ্ট করো না।  

কথাটা শুনে আখির অনেক কষ্ট হলো, তার চোখ দিয়ে অঝরে জল ঝরতে লাগলো, রূপের দিকে তাকিয়ে একটা কথাই বলতে লাগলো, কেন আমাকে ভালবাসলে না রূপ দাদা আমাকে ভালবাসলে কি হতো 🥺।

রূপ ভেতর থেকে কেমন একটা হয়ে যাচ্ছিলো, সে বললো শোনো তুমি ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে ভালো একটা কলেজে ভর্তি হও, মন দিয়ে লেখাপড়া করো, জীবনে অনেক বড় হও এই কথা বলে রূপ চলে গেলো। 
 
আখি আজ ব্যাঙ্গালোর চলে যাচ্ছে, টিনার হাত দিয়ে আখির লেখা সেই ডায়েরিটা রূপের কাছে পাঠিয়ে কাল। আখি আশা করেছিলো রূপ হয়তো আসবে তার সাথে দেখা করতে কিন্তু রূপ এলো না। 

এক রাস মন খারাপ নিয়ে জানলার কাছে বসে বাইয়ে তাকিয়ে আছে আঁখি ট্রেন ছাড়তে আর ৫মিনিট বাকি হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠলো আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছো আগে পিছনে তাকালো রূপদাদা তুমি, রূপ তুমি তো আমাকে না দেখে থাকতে পারবো না তাই ভাবলাম তোমার সাথেই যায়। বিশ্বাস করতে পারছে না আখি যে সত্যিই রূপদাদা তার পাশে বসে আছে, আখি তোমার পাগলো, তোমার ভালো বাসার কাছে আমি হেরে গেছি তোমার ডাইরিটা আমি কালই পড়েছি আসলে আমি কখনো ভাবিনী কেউ আমাকে এতোটা ভালোবাসতে পারে, আমার জন্য এতোটা পাগলামি করতে পারে। তোমার কাছে আমি হেরে গেছি তোমাকে ভালোবাসার একটু সুযোগ করে দিবে আমাকে 😊 আঁখির সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছিলো খুশিতে তার চেখে জল চলে এলো। রূপ আমাকে পাওয়া জন্য অনেক কেটেছো আর না আখি। এই বলে রূপ আঁখি চোখে জল মুছিয়ে দিলে আর বুকে টেনে জরিয়ে ধরলো। 🥰

লেখিকা ( আরাধ্যা রায়)  

আখির মতো যদি আপনার জীবনেও কেউ থেকে থাকে, আপনার জন্য এরকম পাগলামো করে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এমনই নতুন নতুন ভালোবাসার গল্প পেতে আমাদের অপরিচিতা ব্লগারের সাথে থাকুন। 😊