কিরণ ছিল এক অতিসাধারণ, কিন্তু অপূর্ব সুন্দরী অচিনপুর গ্রামের মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই তার জীবন ছিল কঠিন, সেসবের সঙ্গে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। তবে তার মন ছিল একেবারে মুক্ত, স্বপ্নে ভরা। সে খুব ভালো নাচ করতে পারতো গ্রামের বাচ্চদের নাচ শেখাতো সে একইগ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সুশান্ত ছিল তার প্রথম ভালোবাসা। সুশান্ত ছিল গ্রামের বড় বাড়ির ছেলে, আর কিরণ ছিল একজন দেবদাসী পরিবারের মেয়ে। দুই পরিবারের মাঝে সামাজিক পার্থক্য এতটাই ছিল যে, তাদের ভালোবাসা কখনোই পূর্ণ হতে পারে না—এটা কিরণ জানতো। তবে সুশান্তের চোখে ছিল এক অদ্ভুত দীপ্তি, যা কিরণকে আকৃষ্ট করতো। তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসতো, কতো সময়ে গোপনে দেখা করত, একসাথে সময় কাটাতো একে অপরের ভালোবাসায় ডুবে থাকত। সুশান্ত কিরণের চোখে পৃথিবীর সব আনন্দ দেখতো, আর কিরণ সুশান্তের প্রতি ভালোবাসায় নিজের সমস্ত দুঃখ ভুলে যেত। কিন্তু, সমাজের বাধা ও পরিবারের শৃঙ্খল তাদের ভালোবাসাকে বেঁধে রেখেছিল।
কিরণের জীবন ছিল দেবদাসীর মতো। জন্মগতভাবেই তার জীবনে কোনো সুখ ছিল না। তাকে তার পরিবার কখনোই ভালোবাসেনি, বরং তাকে দাসী হিসেবে ব্যবহার করতো। সুশান্তের প্রেমে সে একমাত্র আশার আলো দেখেছিল। কিন্তু পরিণতির শুরুতে যখন তার পরিবার জানলো, তখন সব কিছু বদলে গেল। সুশান্তকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মতেই অনুমতি দিলো না বরং বললো ওকে ভুলে যাও মান সম্মান নষ্ট হওয়ার আগে।
তার পরিবার কিরণের বংশের ওপর ঘৃণা করেতো আর সে ঘৃণার শিকার হতে হতে কিরণ জানতো যে, তাদের ভালোবাসা কখনোই পূর্ণ হতে পারে না।
সুশান্তের পরিবার তাকে বিয়ের জন্য এক সম্ভ্রান্ত মেয়েকে বেছে নিল। কিরণ, যাকে এতো ভালোবাসো, সে অন্য করুর হতে চলেছে। কিরণ দিন দিন আরো একা হয়ে যাচ্ছিল। সুশান্তও তাকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলো, কারণ সেও কিরণে ভালো চেয়েছিলো, তবে তার হৃদয় ছিল ভাঙা। কিরণকে ছেড়ে যাওয়া তারজন্য তীব্র বেদনার ভেতরে ভেতরে সেও কষ্টের মরছিলো , কিন্তু সামাজিক অবস্থান আর পরিবারের জন্য সে কিছুই করতে পারলো না। একদিন, কিরণ একাকী দাঁড়িয়ে ছিল গ্রামের নদীর প্রান্তে, যেখানে সেই সময় সুশান্ত এলো কিরণের কাছে সুশান্ত কিরণকে বুকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো তুমি আমার হলে কী হতো কিরণ, কেন ভাগ্য আমাদের এক করলো না, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তার চোখের জল চলে আসলো। সে জানতো, তাদের ভালোবাসা কখনোই পূর্ণতা পাবে না। তারা কখনো এক হতে পারবে না। কারণ সুশান্ত কিরণকে নিয়ে পালিয়ে যাবাও পথ নেই কারণ তার বাবা অসুস্থ জমিদার সব দায়িত্ব তার উপর ছিলো, পরিবারের সবাই দায়িত্ব ও তাকে নিয়ে হয়েছিলো। কিরণ সুশান্তের চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, তোমার আমি সারাজীবন ভালোবাসবো সে তুমি বিয়ে করো আর যাই করো। কষ্ট বেদনায় শক্ত করে শেষ বারের মতো জরিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো কিরণ।
বাধ্য হয়ে সুশান্তের বিয়ে করলো কিন্তু কিরণকে ভুলতে পারেনী সে । আর কিরণ সুশান্তের থেকে দূরে অন্য একটা শহরে চলে গেলো, পরিবারে কারুর কথা না শুনেই দেবদাসী জীবন কাটানোর জন্য সে কাজের প্রতি মনোযোগ দিল। তবে, তার হৃদয়ে সেই প্রথম ভালোবাসা, সেই অপূর্ণ ভালোবাসার স্মৃতি সবসময় রয়ে গেল। কিরণ জানতো, তার জীবন দেবদাসীর মতোই হবে— কারণ জন্ম থেকেই যে সে দেবদাসী , বাকি জীবনটা সে একা দেবদাসী হয়েই কাটাতে চাই। কিরণ নাচতে পারতো ভালো তাই সে একটা নাচের স্কুলে নাচ শিখাতো, আর এভাবেই কিরণ সুশান্তের ভালোবাসায় আঁকড়ে বাচতে লাগলো।
লেখিকা ( আরাধ্যা রায়)
1 মন্তব্যসমূহ
সুন্দর খুব সুন্দর গল্প ❤️
উত্তরমুছুন