নিলয় একদম নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। অনুজাদের অবস্থা অনেক ভালোই ছিল নিলয়, এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে নিলয় এর  সঙ্গে অনুজার পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে তারা ২ জন ২জনকে ভালোবাসে ফেলে কিন্তু নিলয়ের কোনো চাকরি হচ্ছিল না, কিন্তু অনুজার বাড়ির থেকে খুব চাপ দিচ্ছলো বিয়ের জন্য কারণ অনুজার বাবা ছিলো না তাই তার মা, তার কাকা কাকিমা চেয়েছিলেন তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে, নিলয় চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু চাকরি হচ্ছিলো না, তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো সে বাইরে মানে ব্যাঙ্গালোর চলে যাবে কিন্তু অনুজার কী হবে সেটা ভেবেই তো তার অবস্থা অনেক খারাপ হচ্ছিলো। সে যদি বাইরে চলে যায় তাহলে অনুজার অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে, একদিন অনুজাকে ফোন করে নিলয় বলে তুমি আমাকে ভালোবাসো তো অনুজা বলে কেন তুমি জানো না কতটা ভালোবাসি, নিলয় বলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে পালিয়ে, আসলে অনুজা আমার কোনো চাকরি হচ্ছে না, কী করবো বাইরে চলে যাবো কিন্তু তোমাকে রেখে আমি কীভাবে যাবো, তার থেকে তোমাকে বিয়ে করে আমি মা আর বাবার কাছে রেখে আমি বাইরে গিয়ে কিছু একটা ব্যবস্থা  করবো, তুমি যাবে তো আমার সাথে আমার বাড়ি হয়তো তোমার কষ্ট হবে একটু কিছু দিন কিন্তু তারপর ঠিক হয়ে যাবে দেখো আমি সব ঠিক করে দিবো, অনুজা তোমাকে অন্য কারুর হতে দিতে পারবো না আমি, এই কথা শুনে অনুজার চোখে জল এলো কেন পারবো না পাগল আমি ঠিক পারবো তারপর তারা বিয়ে করে পালিয়ে, নিলয় মা বাবার কাছে অনুজাকে রেখে ব্যাঙ্গালোর মানে কলকাতার বাইরে যায় এবং সেখানে গিয়ে একটা কোম্পানিতে চাকরি পায়, সেলারি কম ছিলো, প্রতিমাসে টাকা পাঠাতো, পুরো টাকায় প্রায়, অনুজার বাবা না থাকলেও অনুজা কোনোদিন কষ্টে বড় হয়নী কারণ তার বাবার অনেক টাকা ছিলো তার বাবা একজন উকিল ছিলো কিন্তু এখানে এসে নিলয়ের পরিবারে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল একটু, কিন্তু তবুও ভালোবাসার জন্য তো মানুষ সবই পারে, আর অনুজার শশুর শাশুড়ী খুব ভালোবাসতো। নিয়ল প্রতিদিন কল করতো অনুজাকে ভিডিও কলেও কথা বলতো, অনুজা বুঝতে পারতো নিলয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে , নিলয়ের সেলারি কম ছিলো বলে সে এই চাকরি পাশাপাশি অন্য একটা কাজও যোগার করেছিলো, অনুজা এটা বুঝতে পারে নিলয়কে বলে সে যেন অন্য কাজ না করে অনুজা বিউটি পার্লারের কাজ জানতো তাই সে তাদের বাড়ির সামনে একটা পার্লার খোলে তারপর সেখানে অনেক লোক আসতো এভাবে ভালো ই দিন যাচ্ছিলো, নিলয় ৬ মাস হয়ে গেছে বাড়ি থেকে বাইরে  তারসাথে অনুজার দেখা হয়নী ৬মাস ২ জনই ২ জনকে খুব মিস করতো কিন্তু কী আর করার। অনুজার মা কাকা কাকি অনেক বার অনুজাকে নিয়ে যেতে এসেছে কিন্তু সে যায়নী তার শশুর শাশুড়ী ছেড়ে নিলয়কে ছেড়ে সে কোথাও যাবে না, বলেছে, নিলয় একদিন ফোনে বললো অনুজাকে খুব বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে, কতদিন তোমাকে মা বাবাকে দেখিনা, অনুজা বললো তুমি তো আমাকে বলেছো সব ঠিক হয়ে যাবে আর এখন তুমি ই মন খারাপ করছো, সামনে ছিলো অনুজার জন্ম দিন অনুজার মন খারাপ হচ্ছিলো যদি নিলয় আসতো তাহলে হয়তো খুব মজা হতো, নিলয় প্লান করেছিলো কোম্পানির থেকে ৬ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবে অনুজার জন্ম দিন এর আগের দিন অনুজাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে অনুজাকে কিছু ই বলেনী, কাল পরশু অনুজার জন্ম দিন ছিলো। নিলয় অনুজাকে ভিডিও কল করেছে, বলছে পরশু তোমার জন্য দিন তুমি কী গিফট চাও বলো, অনুজা বলে তুমি এভাবেই আমাকে ভালোবাসো তাহলেই হবে,  নিলয় তখন বলে উঠে সে তো বাসবোই পাগলি। নিলয় অনুজাকে বলে আজ রাতে আমি কী সপ্ন দেখেছি জানো, অনুজা বলে কী, নিলয় বলে উঠলো আজ আমি স্বপ্ন দেখেছি তোমার জন্মদিনের দিন হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়ে,খোলা চুলে তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। এখন হু হু করে হেসে বলল তোমার স্বপ্ন কীভাবে পুরণ  হবে বলো তুমি তো আমার থেকে অনেক দূরে এখন। নিলয় বললো কি বলতে পারে পূরণ হতেও পারে। আসলে সেই দিন নিলয় অনুজার জন্য হালকা গোলাপি রংয়ের শাড়ি কিনেছিলো অনুজার জন্মদিনের জন্য, সারপ্রাইজ দেবে বলে সেদিন রাত সাতটায় নিলয় ট্রেন উঠারছিলো, ট্রেনে ওঠার আগে নিলয় তার বাবার কাছে ফোন করে বলে  বাবা আমি বাড়ি ফিরছি, একটু পরে ট্রেন, পরশু অনুজার  জন্মদিন তার আগে পৌঁছে যাব, কিন্তু তুমি মা বা অনুজা  কাউকে বলবেনা, আমি ওদের সারপ্রাইজ দিবো, ঠিক আছে ঠিক আছে সাবধানে  আয়, অনুজার পার্লারের অনেক কাস্টমার আসতো, অনুজা কাজও ছিল সুন্দর, পরের দিন আটটায় নিলয় হাওড়া এসে নামে হাওড়া থেকে শিয়ালদার  আসবে ট্রেনে উঠবে এক ঘন্টা পর, এরই মাঝে অনুজা  ফোন করেছে নিলয় কে বলছি কি ব্যাপার বলতো, কাল রাত্রে আমাকে একবার ফোন করনো, সকালে আটটা বেজে যাচ্ছো কল করোনি কেন, এক্ষুনি ভিডিও কল করো। নিলয় কিছুতেই ভিডিও কল করবে না কারণ ভিডিও কল করলেই নিলয় ধরা পড়ে যাবে, নীলা বলছে এখন আমার ডিউটি  যেতে হবে আমি ফিরে ভিডিও কল করছি  রেগে  কেটে দেই কল অনুজা। ৯ টা ১৫ নিলয় হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠে, ট্রেনে বসে ভাবছে নিলয় পাগলিটা  যখন আমাকে দেখতে পাবে কতই না খুশি হবে, আর মাও কত খুশি হবে, ম্যাডাম রাগ করেছে আমার উপর আমি বরং এসএসসি করি, বলছি শোনো না রাগ করো না তুমি রাগ করলে আমার ভালো লাগে না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি পাগলি❤️অনুজার শাশুড়ি অনুজাকে  বলছে বৌমা নিলয়ের কাছে একটা ফোন করো তো, আজতো ফোন করলো না, বলছি মা আপনার ছেলে এখন খুব বিজি সকলে করেছিলাম তার এখন সময় নেই আমাদের কারুর সাথে কথা বলার,  একথা শুনে নিলয়কে মা বুঝতে পারছে অভিমান হয়েছে বৌমার তাই সে  আর কিছু বলে না। ৪:৪৫ মিনিটে কলকাতার কাছাকাছি একটা জায়গায় নিলয় যে ট্রেনে ছিলো সে ট্রেনটির অ্যাক্সিডেন্ট হয়, বাড়ি ফিরছিল নিলয়ের বাবা বাজার থেকে বাজার করে, হঠাৎ দোকানে এই খবরটা দেখে  হকচকিয়ে উঠলো, দ্রুত বেগে বাড়িতে এসে বৌমাকে ডাকতে লাগলো বৌমা, বৌমা,অনুজা ঘর থেকে বাইরে এসে বলল কি হলয়ে বাবা , নিলয়ের মা ও বাইরে আসলো বললো কী হয়েছে, নিলয়ের বাবা কাঁদো কাঁদো বললো হাওড়া থেকে কলকাতা আসার ট্রেন এক্সিডেন্ট হয়েছে, শুনে অনুজা  একটু অবাক হলো কিন্তু তারথেকেও বেশি অবাক হলো শশুর মশাইের চোখ মুখের অবস্থা দেখে, নিলয়ের বাবার  বলল নিলয় কে ফোন করো না বৌমা, অনুজা জিজ্ঞেস করার আগেই নিলয়ের বাবা বলল নিলয় ওই ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলো, তোমাকে আর তোমার মা কে বলতে বারণ করেছিলো, একথা শুনে অনুজার মাথায় আকাশ ভেঙে পড় লো, নিলয়ের মা শুনে অসুস্থ হয়ে গেলো। ফোন করতে যাবে নিলয়কে ঠিক এমন সময় অনুজার  ফোনে আননং নাম্বার  থেকে একটা কল এলো, বলল আপনি কি বাড়ির লোক বলছেন, অনু যা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল হ্যাঁ, ফোনের লোকটি বলে উঠলো হাওড়া থেকে কলকাতায় ফিরের সময় ট্রেনটির এক্সিডেন্ট হয়েছে,ওখানে নিলায় সরকারও ছিলেন , উনার মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগেছে উনাকে, আরএমবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, অবস্থা একদম ভালো না দয়া করে তাড়াতাড়ি আসুন অনুজার তো এই কথা শুনে চোখ দিয়ে অঝোর জল বেরোতে থাকলো। নিলয়ের বাবা, মা, অনুজা সবাই হাসপাতালে পৌঁছালো। ডাক্তার এসে বললো সরি হি ইজ নো মোর, একটা নার্স এসে নিলয়ের ব্যাগটা অনুজার হাতের দিয়ে গেলো ব্যাগটা উপরের  অংশ ছিঁড়ে গেছিলো, ব্যাগের ভেতরে নিলয়ের কেনা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি শাড়ি টা ছিলো, কিন্তু শাড়িটা লাল রক্তে ভেজা ছিলো, শাড়ি টা দেখে অনুজা হামাগ করে কেঁদে উঠলো।নিলের  মৃত্যুর পর থেকেই অনুজা খুব চুপচাপ হয়ে গেছে, হয়তো জীবনে হাসতে হয় কিভাবে সেটাও সে ভুলে গেছে, একটা চাকরি জোগাড় করেছে, পাশাপাশি পার্লারের কাজও করে,শাশুড়ি শাশুড়িকে দেখাশোনা করে, কিন্তু তার ভেতরের কষ্টগুলো তাকে কুরে কুরে খায়, প্রতিদিন সে প্রতি রাতে নিলয় কে মিস করে, নিজে নিজে ই নিলয়ের সঙ্গে একা একা  কথা বলে, অনুজা নিলয় কে একটা প্রশ্নই করে  আচ্ছা নিলয় শেষটা তো অন্যরকম হতে পারতো তবে এমন কেন হলো, সত্যি কি বেশি ভালবাসলে মানুষ হারিয়ে যায়, আমি যদি জানতাম তুমি আমার থেকে এত দূরে চলে যাবে, তাহলে কখনো আমি তোমাকে এতো ভালোবাসতাম না। 😔🥺

আরাধ্যা রায়