ভালোবাসা নাকি স্বর্গের মতো সুন্দর, কিন্তু আমি সেটা উপলব্ধি করার আগেই , সেটা অন্য রকম মোড় নেই আমার জীবনে। তবে এখন এই আমিটা আর সেই আগের আমি টার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। নিজেই ভাবি নিজের কথা আর চোখে জল কেন জানিনা আটকে রাখতে পারি না। আমি সেই আগের মেঘলা আর এই মেঘলার কোনো মিলই খুঁজে পায় না। আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগের ঘটনা। 


আমার বাবার উকিল, কাকারা সবাই চাকরি করে বড় বড় কোম্পানিতে, জয়েন্ট ফ্যামিলি আমাদের আমার বাবা আর ২ কাকা, আমি বাবা মার একমাত্র সন্তান।  মেজো কাকা ১টায় ছেলে আর ছোট কা কখনো বিয়েই করেনী।  বাড়িতে আমি আর মেজকাকার ছেলে এই ২ টায় সন্তান। তাই সবাই আমাদের ২ জনকেই মাথায় করে রাখতো। আমাকে সবাই অনেক ভালোবাসতো। দাদু ঠাম্মি থেকে শুরু করে বাড়ি আমাদের বাড়িতে কাজ করতো যে সে অবধি। 


আমার আবদার মিটাতে বাবা কাকারা, সবাই ব্যাস্ত। আমি উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে ভালো একটা রেজাল্ট করি। তারপর নামকরা একটা কলেজে ভর্তি হই। বাড়ি থেকে ই কলেজ করতাম।  একদিন আমি মিসোতে একটা ড্রেস অর্ডার করি বান্ধবীর জন্ম দিনে পড়ে যাব বলে। ২ সপ্তাহের মধ্যে ড্রেসটা আসে। দিতে আসে যে ডেলিভারি বয় সে আর্য। আমাকে কল করে বলে ম্যাম আপনার একটা পারসেল আছে আমি বললাম একটু দাঁড়ার আমি নিচে আসছি। নিচে গিয়ে প্রথম আর্য সাথে আমার প্রথম দেখা,  খুব মায়াবী চেহারা ওর, দেখতে খুব সুন্দর না হলেও কেন জানিনা অসুন্দর ও বলা চলে না। ও তো আমাকে দেখে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। বিরক্তি তো দূরের কথা  আমার ও কেন জানি মনে হচ্ছে আর কিছু সময় আমার দিয়ে তাকিয়ে থাক। তারপর আর্য আমাকে জিজ্ঞেসা করলো ম্যাম পারসেল ঠিক আছে কিনা দেখো নিন। আমি খুলে দেখলাম ঠিক আছে । বললাম অনলাইনে পেমেন্ট করে দিয়েছি। তারপর আর্য চলে গেলো  বাইক নিয়ে আমার চেখের সামনে দিয়ে আমি শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম। 


এভাবে শুরু হল আমাদের  পরিচয়, তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহে আমার বাড়িতে কিছু না কিছু দিতে আসতে হতো আর্য কারণ ওকে দেখার জন্য আমি কিছু না কিছু অর্ডার করতাম। ওর সাথে ফোনে কথা বলা শুরু করলাম। একদিন ও আমাকে প্রোপ্রোজ করলো। আমিও না করলাম না। ও ডেলিভারি দিতে আসলে আমার সাথে দাড়িয়ে কথা  বলতো, হাসাহাসি করতাম এটা আমার মেজকাকি দেখে একটু সন্দেহ করেছিলো, কিন্তু আমাকে এতোটাই ভালোবাসতো সবাই যে ওনী কখনো কাউকে একথা বলেনী। 


চড়ক পূজার মেলাতে আমি আর্য সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম সেখানে আর্য হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ দিয়ে আই লাভ ইউ বলে, সেটা আমার ছোটকার এক বন্ধু দেখে ভিডিও করে ছোটকাকে পাঠায়। তারপর থেকে শুধু হয় লড়াই, আমি বাড়িতে যাবার পর সবাই আমাকে নানা কথা বলে, বাবার থেকে শুরু করে ঠাম্মা দাদু অবধি। এতো ছেলে থাকতে একটা গরিব ডেলিভারি বয়কে ভালোবসেছি, আমাদের পরিবারের মান সম্মান নষ্ট করছি ইত্যাদি। আমি অনেক কষ্ট পেয়ে কান্না করছিলাম সবাই কত ভালোবাসে আর আজ এমন বকলো। অনেক সিন্ধাতের পর আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলাম আর্য সাথে, মা আমার জন্য যা গয়না করে রেখেছিলো সব নিয়ে আর্য কিন্তু আমাকে কিন্তু আনতে বলেছিলো না। আমি আমাদের কথা চিন্তা করে নিয়েছিলাম কিন্তু ক্যাশ ও নিয়েছিলাম। বিয়ে করে, পালিয়ে আমি আর আর্য একটা ভাড়া বাড়িতে উঠলাম, আমি রান্না, কোনো কাজই পারতাম না, আর্য সব করতে সব শিখাতো আমাকে ও তখন ডেলিভারি কাজ ছেড়ে একটা ফোনে দোকান থাকতে শুরু করলো, অনেক ভালোবাসতো ও আমাকে। পরিবারের সবাই ছেড়ে আসার কষ্ট বুঝতে দেইনী কখনো। আমার পালিয়ে আসায় পরিবারের লোক এতোটায় কষ্ট পেয়েছিলো তারা আর আমাকে খোঁজার চেষ্টা করে নী।  ভালো ই চলছিলো আমার আর আর্য সংসার। ৬ মাস হলো আমার বিবাহিত জীবনের, একদিন রাতে আর্য অনেক রাতে বাড়ি ফেরে তাও নেশা করে আমি তো পুরো অবাক, তারপর থেকে কেমন যেন আমার চোখের সামনে আর্য বদলে যেতে থাকলো, প্রতিদিন নেশা করতো আর শুধু টাকা টাকা করতো। আমি বুঝতে পারছি লাম না এ কোন আর্য কেন জানিনা সেই আগের আর্যকে খুঁজে পাচ্ছিলাম ওর মধ্যে। একদিন আমার গয়নাগুলো চাইলো আমার থেকে আমি না বললাম আমাকে চর মারলো জোর করে গয়না গুলো কেড়ে নিয়ে চলে গেলো। আমার কষ্ট বুকটা ফেটে  যাচ্ছিলো কান্না করতে লাগলাম।  দিন দিন আর্য আরও ধ্বংশ হয়ে লাগলো, আমাকে সহ্যই করতে পারতো না আমিতো ভালোবাসেছি আমি ওকে বুঝতে চাইলাম কিন্তু ও কখনো বুঝিনী। একদিন ও আমাকে বুঝতে দিলো ও কাছে আমার জায়গায় কোথায়। ও শুধু নেশায় করতে না জুয়াও খেলতো আমকে নিয়ে একজনের সাথে বাজি ধরে হেরে যায় আর তার হাতে আমাকে তুলে দেওয়া জন্য আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। আমি সেদিন মৃত্যুর আর কী তার থেকেও ভয়ংকর ভাবে সময় পার করেছিলাম, সেদিন আমি আর্য আর ওই লোকটার কাছ থেকে পালিয়ে আসি অনেক কষ্ট । তারপর রাস্তায় আপনার বাবার গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়। আপনার বাবা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিন আমি ইচ্ছে করলেই আমার বাড়ি ফিরে যেতে পারলাম কিন্তু আমার বিবেক আমাকে বাধা দিলো যে পরিবারের সম্মান নষ্ট করে চলে এসেছি সেখানে কীভাবে ফিরি। আবার কীভাবে গিয়ে তাদের বোঝা হয়ে থাকি। 


আপনার বাবা ভালো তাই আপনার বাবাকে চলেছিলাম আমাকে একটা থাকার জাগিয়ে ব্যাবস্তা করে দিতে ওনী আপানাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো আর ওনাকে দেখাশোনা দায়িত্ব দিলো। 

 

অনিক : আচ্ছা কেন আর্য নেশা খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলো জানেন কিছু? 

 

মেঘলা : না সেটা জানার সুযোগ টা পায়নী। সবমিলিয়ে আমি এখন ও বলবো তবুও আমি আর্যকে ভালোবাসি। আমি সেই আগে আর্য কে এখন আমার সপ্নে দেখি, কল্পনায় ভাবি। ভালোবাসা কখনো মরে না হৃদয় সতেজ থাকে সবসময়। 


অনিক : বুঝলাম। আপনারা জীবনের গল্প টা শোনার খুব ইচ্ছে ছিলো আজ সেই ইচ্ছে পূরণ হলো। মনে মনে অনির বলে ( আমি ও বিদেশ থেকে এসে আপনকে দেখে, আমার দায়িত্ব, কর্তব্য দেখে আপনার জীবনের গল্প শুনে, আপনার সব মেনে নিয়ে আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু কিছু ভালোবাসা নিরবেই সুন্দর, হয়তো আমি আপনকে ভালোবাসি জানলে আপনি আমাদের ছেড়ে  চলে যাবেন,  তার থেকে না হয় নিরবই থাক, আপনি আমার পাশে থাকুন বন্ধু হয়ে তাহলেই হবে। তবে একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে আপনাকে হে  মায়াবী সুন্দরী তোমার সমস্তটা মেনে নিয়েছি আর বার বার বলছি তবুও তোমায় ভালোবাসি, তবুও তোমার ভালোবাসি, তবুও তোমার ই ভালোবাসি) । 




পৃথিবীতে ভালো মন্দ সব ধরনের মানুষই আছে। ভালোবাসা তুচ্ছ হয়না কেউ ভালোবাসতে পারে কেউ পারে না, মানুষের সময় খারাপ যায় মাঝে মাঝে তার জন্য মানুষের পুরো জীবন খারাপ যাবে এটা না। ভালো- খারাপ, সুখ -দুঃখ,  মিলেই তো জীবন 


  লেখিকা  : আরাধ্যা রায়  ❤️